ঢাকা, রবিবার ২৮, এপ্রিল ২০২৪ ১২:৪৫:৪৫ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
অসুস্থ হয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা, অনলাইনে ক্লাস দাবি হিট অ্যালার্টের মেয়াদ বাড়লো আরও ৩ দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে আজ, মানতে হবে যেসব নির্দেশনা খিলগাঁওয়ে একইদিনে তিন শিশুর মৃত্যু শেরে বাংলার কর্মপ্রচেষ্টা নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে বৃষ্টি কবে হবে, জানাল আবহাওয়া অফিস

হৈমন্তির রূপ-গন্ধে মুগ্ধ উত্তরা গণভবনে আসা দর্শনার্থী 

অনু সরকার | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০২:১৭ পিএম, ৩ মে ২০২৩ বুধবার

উত্তরা গণভবনে বঙ্গবন্ধুর লাগানো হৈমন্তি গাছ।  ছবি: মোকারম হোসেন।

উত্তরা গণভবনে বঙ্গবন্ধুর লাগানো হৈমন্তি গাছ। ছবি: মোকারম হোসেন।

নাটোরের উত্তরা গণভবনে এখন হৈমন্তির ভরা মৌসুম। সাতটি হৈমন্তির রুপে-গন্ধে অনন্য হয়ে উঠেছে উত্তরা গণভবনের আঙিনা। ফুলের কানে ভ্রমরের গুঞ্জনে মোহনীয় চারদিক। 

নাটোরের উত্তরা গণভবনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই ফুলের একটি চারা নিজ হাতে লাগিয়েছিলেন। ১৯৭২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি লাগানো গাছটি মৃতপ্রায় অবস্থায় পড়ে ছিল বহু বছর। বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে পরিচর্যা করে বাঁচিয়ে তোলা সেই হৈমন্তী এখন সুবাস ছড়াচ্ছে উত্তরা গণভবনসহ আশপাশের এলাকায়।

৭২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উত্তরা গণভবনে সফরকালে স্বহস্তে একটি হৈমন্তী গাছ রোপণ করেছিলেন। কিন্তু গাছটির চারদিকে ঝোপজঙ্গলে ভরা ছিল। পরে পরিষ্কার করে গোড়া বেঁধে দেওয়া হয়। দীর্ঘদিন ধরে অযত্ন-অবহেলায় থাকায় পোকার আক্রমণে গাছটি মৃতপ্রায় হয়ে পড়ে। তৎক্ষণাৎ গাছটি কীভাবে রক্ষা করা যায় সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগে যোগাযোগ করা হয়। গাছটি বাঁচিয়ে তুলতে ২০১৮ সালের ১৮ মার্চ পর্যবেক্ষণে আসেন একদল বিশেষজ্ঞ। 

প্রতিনিধি দলের প্রধান বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. নাজিরুল ইসলাম সে সময় বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বহস্তে লাগানো গাছ অনেক ঐতিহ্য বহন করে। বর্তমানে গাছটির বয়স ৪৬ বছর। তা ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে অযত্ন-অবহেলায় থাকায় পোকার আক্রমণে গাছটি নষ্ট হয়ে গেছে। কীভাবে গাছটি সজীব করে তোলা যায় সে বিষয়ে কিছু পরামর্শ দিয়েছি। এরপর উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞ ও কৃষিবিদদের পরিশ্রমে গাছটি প্রাণশক্তি ফিরে পায়। ভরে ওঠে ফুলে ফুলে।

অপরুপ স্থাপত্য শৈলীর রাজপ্রাসাদ আর বিভিন্ন দেশ থেকে নিয়ে আসা অসাধারণ সব সামগ্রীর সংগ্রহশালাকে ছাড়িয়ে যায় গণভবনের দুষ্প্রাপ্য কিছু গাছের সমাহার। এর বেশিরভাগটাই ফুল গাছ। এরমধ্যে পারিজাত, ম্যাগনোলিয়া, নাগালিঙ্গম, এগপ্লান্ট, সুরভিকা আর হৈমন্তি অন্যতম। এসব ফুল গাছের উপস্থিতি জানান দেয়, উত্তরা গণভবন শুধু রাজপ্রাসাদই নয় সুবিশাল পুষ্প সাম্রাজ্যও বটে।

এরমধ্যে পারিজাত চক্রাকারে পাতার রঙ পাল্টিয়ে লাল রঙের ফুলের থোকায় পরিণত হয় বসন্তে। এগপ্লান্টে প্রায় সারা বছর দু’একটা ফুল থাকলেও শীত আর বর্ষা এর ভরা মৌসুম। 

নাগালিঙ্গম আর ম্যাগনোলিয়া বসন্তে ফুটলেও বিস্তৃতি বর্ষাকাল পর্যন্ত। রাজার প্রিয় ফুল সুরভিকা ফোটে মূলত শীতকালে।
আর বসন্তে পাতা হারিয়ে হৈমন্তি গাছগুলো হয়ে পড়ে বিবর্ণ। বসন্তের শেষার্ধে ফুল আসতে শুরু করলেও গ্রীষ্মে হৈমন্তির রুপ হয়ে ওঠে অপরুপ। সারাগাছ জুড়ে ফুল আর ফুল, কোন পাতা নেই। গ্রীষ্মের প্রচন্ড তাপদাহে এ যেন শুভ্র সুন্দর শান্তির পরশ। গ্রীষ্মের এ ফুল সুবাস ছড়াবে অন্তত দুই মাস। এটিই হৈমন্তির ভরা মৌসুম। শরতে আরো একবার হৈমন্তি শুভ্র সুন্দর হয়ে ওঠার চেষ্টা করে। তবে এত ফুলের প্রাচুর্য আর সুবাস তখন থাকে না।

গণভবনের সিংহ দুয়ার পেরিয়ে সোজা এগিয়ে গেলে ইটালিয়ান গার্ডেনের প্রবেশপথের আগে দাঁড়িয়ে আছে একটি হৈমন্তি। ইটালিয়ান গার্ডেনে একটি, হরিণনিবাসে একটি, সংগ্রহশালার সাথে একটি, রাজপ্রাসাদের সামনে দুইটি হৈমন্তি গাছ। আর রাণীমহলে একটি হৈমন্তি গাছ। ধীরে বর্ধনশীল হৈমন্তির সাতটি গাছের মধ্যে রাজপ্রাসাদের সামনের গাছটি ফুলে ফুলে সবচে’ সমৃদ্ধ। 

দর্শনার্থীদের প্রশান্তি আর মুগ্ধতার কেন্দ্রবিন্দু এখন হৈমন্তি। প্রতিদিন হাজারো দর্শনার্থী সৌন্দর্য উপভোগ করছেন হৈমন্তীর। 

প্রকৃতিবিদ মোকারম হোসেনের লেখা থেকে জানা যায়,  উদ্ভিদবিজ্ঞানের শনাক্তি মতে, হৈমন্তি নামক এই উদ্ভিদের সঠিক নাম কুরচি। দেশের প্রচলিত উদ্ভিদ তালিকায় হৈমন্তী নামে পালিত বা প্রাকৃতিক কোনো বৃক্ষের সূত্র খুঁজে পাইনি। কুরচির স্থানীয় অন্যান্য নামের মধ্যে কুটজ বা গিরিমল্লিকা অন্যতম। এ গাছ বৃহত্তর সিলেট, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও দেশের শালবন অঞ্চলে প্রাকৃতিকভাবেই জন্মে। শ্বেত-শুভ্র এই ফুল সুগন্ধের জন্য বিখ্যাত। 

জেলা প্রশাসক ও উত্তরা গণভবন ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আবু নাছের ভূঁঞা বলেন, গণভবনের আঙিনায় হৈমন্তি’র সৌন্দর্য মুগ্ধ হচ্ছেন দর্শনার্থীরা। আকর্ষণীয় এ গাছের বংশ বিস্তারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।